বাংলাদেশীরা জাতিগত কারণেই পরোপকারি। সেটার প্রমাণ আবারো দিলেন এক বাংলাদেশি চিকিৎসক। নাম মনজুর হোসেন ইমন। দুবাই থেকে উঠেছিলেন এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে। গন্তব্য নিউইয়র্ক। সেই ফ্লাইটেই তিনি বাড়িয়ে দিলেন মানবিকতার হাত। সঙ্গে তা ছিলো একজন যোগ্য চিকিৎসকের দায়িত্বও বটে। ফ্লাইটটি যখন কানাডার আকাশ সীমা অতিক্রম করছিলো তখন গ্রিনিচ মানসময় ২ ডিসেম্বর সকাল ১১টা ২৭ মিনিট। এই চিকিৎসকের হাতেই জন্ম নিলো একটি শিশু।
মনজুর হোসেন জানিয়েছেন, ওইদিন ইকে-২০৩ যখন আটলান্টিক পাড়ি দিচ্ছিলো হঠাৎই একটি ঘোষণা শোনা গেলো, আর কেবিন ক্রুরাও একজন চিকিৎসক খুঁজছিলেন। মনজুর হোসেন জানালেন, তিনি চিকিৎসক। জানা গেলো একজন নারী যাত্রীর লেবার পেইন হচ্ছে। তার সাহায্য দরকার। ওই যাত্রীর কাছে ছুটে গেলেন মনজুর হোসেন। দেখা গেল যাত্রীটি একজন আফগান নারী। জানা গেলো তার তখন ২৮ সপ্তাহের গর্ভাবস্থা।
পরিস্থিতি এমন যে তার বাচ্চা প্রসব করাতে হবে। ইমম্যাচিউরড শিশু তাই জটিলতাতো রয়েছেই। বড় উদ্বেগ হচ্ছে শিশুটি প্রসব হলেও অপ্রাপ্ত শিশুটিকে এই মধ্য আকাশে কোনো ব্যবস্থা ছাড়া বাঁচিয়েই বা কিভাবে রাখা যাবে। প্রথেমই ককপিটে গিয়ে স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে ভূমিতে মেডিলিংকে কথা বলেন চিকিৎসক মনজুর হোসেন। নারীটির শারীরিক অবস্থা জেনে তারা নিকটবর্তী স্টেশন আইসল্যান্ডে অবতরণ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে প্রচণ্ড তুষারপাত চলার কারণে তাও হয়ে পড়ে অসম্ভব। এরপর ফ্লাইটটি হয় কানাডার মন্ট্রিয়লমুখী। ততক্ষণে শিশুটি পৃথিবীর মুখ দেখার অপেক্ষায়। এরপর মনজুর হোসেন অন্তঃসত্ত্বা নারীটির দায়িত্ব নিলেন। প্রতি ২০ মিনিট পরপরই তিনি তাকে পরীক্ষা করছিলেন। এভাবে চললো টানা ৭ ঘণ্টা। ফ্লাইট তখনো আটলান্টিক পাড়ি দিচ্ছে। অবশেষে নারীটি প্রসব করলেন একটি মেয়েশিশু। সম্পূর্ণ সুস্থ। আর সেটি দেখতে ৩৬ সপ্তাহের ম্যাচিউরড একটি নবজাতকের মতোই। এই সময় এমিরেটস’র ক্রুরাও বেশ সহযোগিতা করেন ওই চিকিৎসককে। মা ও শিশু দুজনই বেশ সুস্থ ছিলো, জানান তিনি।
শিশুটি জন্মের পর ফ্লাইটটি কানাডার নিউফাউন্ড ল্যান্ড-এর গ্যান্ডারমুখী হয় আর সেখানে নিরাপদে অবতরণ করে। সেখানেই নবজাতককে ও পরিবারের সদস্যদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর ফ্লাইটটি ফের নিউইয়র্কের পথ ধরে। মনজুর হোসেন বলেন, এটি চিকিৎসক জীবনে তার সবচেয়ে বড় ও মধুরতম অভিজ্ঞতা।